হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম গ্রহণ কিভাবে এবং কোথায় তার বিস্তারির

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম গ্রহণ৫৭০ ইসায়ী সনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন। আরবরা দুইজন নবীর বংশধর। একজন নূহ (আঃ), আর একজন ইসমাঈল (আঃ)। ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরদের বলা হয় কুরাইশ। কুরাইশ গোত্র ছিলো খুবই সম্মানিত।
তাদের নেতা ছিলেন মক্কার প্রধান এবং কাবা ঘরের রক্ষণাবেক্ষণকারী। হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন কুরাইশ গোত্রের প্রথান এবং পদাধিকার বলে কা'বা ঘরের হেফাজতকারী। কুরাইশ গোত্রের লোকেরা বহু ছোট ছোট দলে বিভক্ত ছিলো। আর দল গুলির মধ্যে সবসময় পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ থাকত।
আবদুল মুত্তালিবের ছেলে ছিলো বারো জন।তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ছিলেন অতিশয় দয়ালু,ভদ্র ও বিনয়ী। তিনি দেখতেও ছিলেন খুব সুন্দর। গোত্রীয় প্রথানদের অনেকেই তাদের মেয়েকে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতো। একই গোত্রের আমিনার সঙ্গে আবদুল্লাহর বিয়ে হয়।
কিছুদিন পর একজন ফেরেশতা আমিনার কাছে হাজির হয়ে বললোঃ আপনার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করবে। তার নাম রাখবেন মুহাম্মদ।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম গ্রহণ কিভাবে এবং কোথায় তার বিস্তারির

একবার বাণিজ্যােপলক্ষে আবদুল্লাহকে সিরিয়া যেতে হল। দুঃখের বিষয় ফিরে আসার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মদিনায় ইন্তেকাল করেন।
শিশু পুত্রের মুখ দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি। আব্দুল্লাহর মৃত্যুর ছয় মাস পর আমিনার ঘর আলো করে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর ফেরেশতারা শিশুটিকে ডানা দিয়ে আচ্ছাদন করে আশীর্বাদ করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামোন নির্দেশ দিলেন যে, মধ্যে সকল নবী রাসূলের উত্তম গুণসমূহ দেওয়া হবে। তার চরিত্রে হযরত আদম (আঃ)-এর সদাচনর, হযরত শিশু (আঃ) শিক্ষা, নুহ (আ)এর সাহস, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর দয়া, হযরত ইসমাইল (আ)-এর বাগ্মিত, হযরত ইসহাক (আঃ) আত্মসমর্পণ ও বিনয়,হযরত লুত (আ) এর বীরত্ব,হযরত ইয়াকুব (আ) এর গুপ্ত বস্তুর জ্ঞান, হযরত ইউনুস (আঃ) এর অনুগত, হযরত ইউসুফ (আঃ) এর সৌন্দর্য, হযরত মুসা (আ) এর আপসহীন দৃঢ়তা,হযরত ইউশা (আঃ) এর অধ্যাবসায়, হযরত দাউদ (আ) পরোপকার,হযরত দানিয়েল (আঃ) এর প্রেম ভালোবাসা, হযরত ইলিয়াস (আঃ) এর মর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ, এবং হযরত ঈসা (আঃ) এর সাধুতা গুণের সমাবেশ ঘটবে।


একবার সংবাদবাহক দাদা আব্দুল মোত্তালিবের কাছে গিয়ে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর ভুমিষ্ঠ হওয়ার সুসংবাদ দিল। আব্দুল মোত্তালিব শিশুকে হাতে নিয়ে কা'বাঘরে গেলেন। সেখানে আল্লাহ্‌র শোকর আদায় করলেন এবং নবজাতকের জন্য দু'আ করলেন। মুহাম্মদ মানে 'প্রশংসিত'। 'প্রশংসার যোগ্য।' এ যাবত আর কারো নাম মুহাম্মদ রাখা হয়নি, এই প্রথম একজনের নাম রাখা হল 'মুহাম্মদ'।

তখনকার দিনের অভিজাত আরবদের রেওয়াজ ছিল শিশু সন্তানকে পালনের জন্য ধাত্রীর কাছে দেওয়া। মা আমিনাও আপন পুত্র সন্তানকে হালিমা নাম্নী এক ধাত্রীর কাছে পালনের জন্য দিলেন। হালিমা মুক্ত হওয়ায় শিশুটিকে পালনের জন্য তাঁর গ্রামে নিয়ে গেলেন। হালিমা ও তাঁর স্বামী ছিলেন খুবই গরীব। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁদের কাছে আসার পর থেকে তাঁরা তাঁদের সবকিছুতেই পরিবর্ত্ন লক্ষ্য করলেন। ছাগলগুলি আগের মত খেয়ে-দেয়েও দুধ বেশি দিতে লাগল। হালিমা তাঁর স্বামীকে বললেনঃ শিশুটি খুবই ভাগ্যবাদ।


হালিমার নিজের তিন পুত্র ছিল। তারা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে খেলা করত। একদিন যখন তারা মাঠে ভেড়ার দেখাশোনা করছিল, তখন হঠাৎ ডানাওয়ালা সাদা পোশাক পরিহিত দুইজন এদে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ধরল। ছেলেরা ভয় পেয়ে দৌড়ে গিয়ে হালিমাকে এ খবর দিল।
হালিমা জিজ্ঞাসা করলঃ তারা কারা? বাছা। তারা কি তোমাদের কোন ক্ষতি করেছে?

মুহাম্মদ বললেনঃ না না, তারা ছিল ফেরেশতা, তারা আমার হৃদয় নূর দিয়ে পূর্ণ করে দিতে এসেছিল।

হালিমা তাঁর পুত্রদের বললেনঃ এ কথা কাউকে বলবে না। কেউ হয়তো তাঁর অনিষ্ট করতে পারে। তিনি তাঁর স্বামীকে বললেনঃ মুহাম্মদ (সাঃ) সাধারণ শিশু নয়। আমরা তাঁর দেখাশোনা করতে পারবো না। চলুন, আমরা তাঁকে তাঁর মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।

হুজুর (সাঃ) এর জন্মগ্রহণ কবে এবং কোথায়?

৫৭০ ইসায়ী সনে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কা নগরে জন্মগ্রহণ করেন।

আরবরা কোন নবীজীর বংশধর?

আরবরা দুইজন নবীর বংশধর। একজন নূহ (আঃ), আর একজন ইসমাঈল (আঃ)।

ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরদের কি বলা হয়?

ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরদের বলা হয় কুরাইশ।

হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর দাদা কি ছিলেন?

হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর দাদা আবদুল মুত্তালিব ছিলেন কুরাইশ গোত্রের প্রথান।

ফেরেশতা আমিনার কাছে হাজির হয়ে কি বললো?

ফেরেশতা আমিনার কাছে হাজির হয়ে বললোঃ আপনার একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করবে। তার নাম রাখবেন মুহাম্মদ।


শিশু মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন হালিমা তাঁকে আমিনার কাছে নিয়ে এলেন। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর মায়ের কাছেও বেশিদিন থাকতে পারলেন না। স্বামীর মৃত্যুতে আমিনার মন ভেঙ্গে গিয়েছিল। ভাবনা-চিন্তায় তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি মদীনায় তাঁর স্বামীর কবর জিয়ারত করতে গিয়ে সেখানে মারা যান। শিশু মহাম্মদ (সাঃ) পিতাকে হারিয়েছিলেন জন্মের ছয়মাস আগে। পিতা কেমন ছিলেন তা তিনি দেখেনওনি। মাকেও হারালেন। এখন তাঁর বয়স মাত্র সাত বছর।


এতিম বালকের দেখাশোনার ভার পড়ল বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মোত্তালিব-এর উপর। তিনি যখন কা'বার কাছে অন্যান্যদের সাথে দরকারী কথাবার্তায় ব্যস্ত থাকতেন, তখন শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর পাশে বসে থাকতেন এবং সকল কথা শুনতেন। দাদা তাঁকে আদর করে আহমদ বলে ডাকতেন। বছরখানিক পর আব্দুল মোত্তালিবও ইন্তিকাল করেন। তখন তাঁর চাচা আবু তালিব তাঁকে লালন-পালনেরভার নেন। আবু তালিব তাঁকে আপন সন্তানের মত ভালবাসতেন।
আব্দুল মোত্তালিব মক্কার প্রধান ছিলেন। তিনি কা'বারও রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি মেষ চরানোর কাজে সাহায্য করতে মাঠে যেতেন। তখন খোলা প্রান্তরে নীল আকাশের নীচে বসে তিনি আল্লাহ্‌র সম্বন্ধে চিন্তা করতেন, আল্লাহ্‌র ধ্যান মগ্ন থাকতেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইসলামিক কথা সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url